নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম; নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সোনারগাঁ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এই এলাকার লিচু দেশের অন্য এলাকার চেয়ে আগে বাজারে আসে এবং অনেকে রসালো। তাই সোনারগাঁয়ের লিচুর দেশজুড়ে ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু এ বছর অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহের কারণে ওই এলাকার অন্তত শতাধিক বাগানের লিচু ও এর খোসা পুড়ে ফেটে যাচ্ছে। একটি লিচু যে পরিমান বড় ও পুষ্টিকর হওয়ার কথা তীব্র তাপদাহের কারনে হচ্ছে না। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে লিচু চাষিরা। সেই সঙ্গে পুড়তে যাচ্ছে লিচু চাষিদের স্বপ্নও! মধু মাসের এ সময়টাতে ওই এলাকার লিচু চাষি, বাগানী ও ব্যবসায়ীরা খুশি হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো মাথায় হাত পড়েছে তাদের।
সোনারগাঁ পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের একাধিক বাগান ঘুরে লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লিচু উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে। লিচু বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা বছরে বাগান পরিচর্যা করতে যে পরিমান টাকা খরচ হয়েছে সে টাকা উঠবে কিনা এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
চাষিরা অভিযোগ করেন, এ এলাকার প্রত্যেকটি বাগানে এ অবস্থা চলতে থাকলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তা নূন্যতম খোঁজখবর নিচ্ছেন না।
সোমবার সরেজমিন আজমপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় বাগানের মালিক কুদ্দুছ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাগানের দেশী, বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচু এখনও কাঁচা। আর পাটনাই জাতের লিচু আধা-পাকা। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই এ জাতের লিচু বিক্রি উপযোগী হতো। কিন্তু এ সময়ে লিচু ফেটে চির ধরেছে এবং খোসায় কালো দাগ পড়ে ফেটে যাচ্ছে। অনেক লিচু তীব্র তাপদাহের কারনে রং ধরতে শুরু করেছে। এছাড়া প্রতিদিনই ঝরে পড়ছে লিচু। বৃষ্টি না হওয়ায় লিচু ফোলার জন্য গত সপ্তাহ ধরে বাগানে বাংলা গুটি সার, লাল সার, টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও জিপসাম দিচ্ছেন। একই সঙ্গে কীটনাশক ও পানি ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু এতে লিচু ফেটে যাওয়ার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, লিচুর ব্যাপারে পরামর্শ তো দূরের কথা, এখানকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার চেহারা পর্যন্ত আমি দেখিনি।
লিচু ব্যবসায়ী মাসুম মিয়া জানান, গত বছরও অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহের করনে লিচু বড় ও রসালো হয়নি। এরপর করোনার লকডাউন থাকার করনে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারও একই অবস্থা তাই এখানো বাগান কেনার ইচ্ছা পোষন করছি না। এবারের আবহাওয়া দেখে ও লিচুর বাগানগুলো দেখে বুঝা যাচ্ছে গতবারের চেয়ে এবারের লিচুর ফলন আরো খারাপ হবে। সেজন্য চিন্তা ভাবনা করে এবার লিচুর বাগান কিনবো।
এদিকে সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, লিচু একটি মৌসুমী ফল। লিচু সে মৌসুমে ফুল ও গোটা থেকে সব কিছু প্রকৃতি নির্ভর। তবে গোটা আশার সময় বৃষ্টি হলে ফলন ভাল হয় লিচুগুলো বড় ও রসালো হয়। এবার অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহের কারণে লিচুর ফলন ভাল হয়নি। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তরা কাজ করছে। যদি কোন কৃষক আমাদের পরামর্শ থেকে বাদ পড়ে তাহলে তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা ফিল্ড কর্মকর্তাকে তার বাগানে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।